গুম-খুনের প্রমাণ  রক্ষায় স্মৃতি জাদুঘর বানাতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

গুম-খুনের প্রমাণ  রক্ষায় স্মৃতি জাদুঘর বানাতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গুমের শিকারদের ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের প্রমাণাদি সংরক্ষণে একটি ভয়াল স্মৃতি জাদুঘর (হরর মিউজিয়াম) প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (৪ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর চালানো ভয়ংকর নির্যাতনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এসব শুনে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, এসব নৃশংসতার প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য একটি ‘হরর মিউজিয়াম’ স্থাপন করা উচিত।’

তিনি বলেন, গণভবনে স্থাপিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি সংগ্রহশালার একটি অংশে গুমের শিকারদের ওপর চালানো নির্যাতনের প্রমাণ ও সাক্ষ্য সংরক্ষণ করা হবে।

এর আগে বিচারপতি মইনূল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন পেশ করেন। এ সময় কমিশনের সদস্য নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন ও নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা গুমের ঘটনায় একটি ‘কিলিং ফোর্স’ হিসেবে কাজ করেছে। গুমের পেছনে তারাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতিবেদন নির্যাতনের শিকারদের সাক্ষ্য এবং কিছু জড়িত ব্যক্তির বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে কীভাবে গুম করা হয়েছে এবং অনেককে পরে হত্যা করা হয়েছে, সেই চিত্র এতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’

কমিশন এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮৫০টি গুমের ঘটনা চিহ্নিত করেছে এবং প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে বলে জানান তারা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি ঘটনার পূর্ণ তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও ৩০০ জনের বেশি ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

প্রতিবেদন গ্রহণের পর অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বই আকারে ছাপানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও এটি নিয়ে আগ্রহ রয়েছে।’

তিনি কমিশনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রতিবেদনে উল্লেখ করা জরুরি পদক্ষেপগুলো শনাক্ত করে কোন মন্ত্রণালয় কী করবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন, যাতে সরকার দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে।’

কমিশনের একজন সদস্য জানান, এসব ঘটনা এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক জড়িত কর্মকর্তা ও ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে নিজেরাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এমনকি দুজন কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে দায় মুক্তির আবেদন করেছেন। এই চিঠিগুলো গণভবনে সংরক্ষিত রয়েছে। সে সময়ের সেনাপ্রধানও এসব চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যাতে অন্তত ব‍্যাংক হিসেবে লেনদেন করতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান কমিশন প্রধান।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে কেউ সাত বছর নিখোঁজ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন সংশোধন করে এটিকে পাঁচ বছর করার সুপারিশ করেন তিনি। 

অতিদ্রুত যাতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় জানাতে কমিশনকে পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা ভয়-ভীতি, নানান রকম হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। এদেশের মানুষের জন্য আপনারা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে যারা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে আপনারা তাদের অনুপ্রেরণা।’