
গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। আর এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর ‘উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা’ রয়েছে।
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প এখন বিবেচনা করছেন, ইরানের সুসংরক্ষিত ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না। এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
এর আগে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ‘বেঁচে থাকতে দেওয়া যাবে না’। এ ছাড়া, ইরান সরকারকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে হামলা জোরদারের নির্দেশ তিনি।
ইরান যে সময় ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে, একই সময়ে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচীতে হামলা চালায় তেল আবিব।
এদিকে, প্রথমদিকে এই সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে রাখলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ওই অঞ্চলে বাড়িয়েছেন ট্রাম্প এবং ইরানের ওপর হামলায় মার্কিন বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আমেরিকার সর্বোত্তম স্বার্থেই কাজ করবেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার বিয়েরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের ধ্বংসস্তূপ ও ভাঙা কাচের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলতে পারি, তারা ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক সাহায্য করছে।’
এদিকে, শুক্রবার (২০ জুন) ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য জেনেভায় যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এতে নতুন এক কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, তিনি হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
এর আগে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।