
তখন রাজা ছিলেন তৈমুর লং। তিনি ছিলেন ভীষণ অত্যাচারি। তার ভয়ে সবাই থর থর করে কাঁপতো। আর কাঁপবে না কেন! নির্বিচারে মানুষ মারতেন তিনি। কেউ একটু এদিক ওদিক করলেই তার রেহাই মিলতো না!
সেই তৈমুর লং একদিন যাচ্ছিলেন হোজ্জার গ্রামের ওপর দিয়ে। গ্রামবাসী তো ভয়ে আধমরা! তারা তৈমুর লংকে দেখে এতো সমীহ করা শুরু করলো যে, তৈমুর লং খুব খুশি হলেন। আর খুশি হয়ে আস্ত একটা হাতিই গ্রামবাসীকে উপহার দিয়ে বসলেন!
আস্ত একটা হাতি। বাবা! সে কি যেনতেন প্রাণি! দেখতে ছোট এক পাহাড়ের সমান। আর তার খাওয়ার কী বহর। মণকে মণ কলাগাছ, শাক সবজি, মুলো এক নিমেষে শেষ!
প্রথম কদিন হাতি নিয়ে খুব মাতামাতি হলো। রাজার উপহার! সেকী সবার ভাগ্যে জোটে! গ্রামবাসী সবাই কিছু না কিছু খাবার নিয়ে আসে। হাতিকে যত্ন করে খাওয়ায়। কিন্তু এভাবে আর কদিন। তাদেরও তো পেট আছে। নিজেরা না খেয়ে কি হাতিকে খাওয়াবে?
এরপর থেকেই শুরু হলো হাতির তান্ডব! এর খেতের সবজি, ওর খেতের গম, আরেকজনের কলাগাছ সব খেয়ে সাবাড় করতে লাগলো হতচ্ছারাটা। কারও কারও বাড়িতেও হামলা করতে ছাড়লো না। গ্রামের সব মানুষের মাথায় হাত! কী করে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে?
গ্রামবাসী সভা করলো। কেউ বলে তাড়িয়ে দাও, কেউ বলে খাঁচায় ভরো। কিন্তু তাই কি হয়! রাজার হাতি! তৈমুর লং জানলে কি আর আস্ত রাখবে কাউকে?
শেষে ঠিক হলো, রাজার হাতি রাজাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কে বলবে রাজাকে। নাহ, কারও সাহস হয় না! তখন হঠাৎ একজন বলে উঠলো, ‘কে আবার বলবে! আমাদের হোজ্জা আছে না। রাজার সঙ্গে তার ভালো খাতির’!
সবাই গিয়ে হোজ্জাকে ধরলো। হোজ্জা কী আর করবেন। রাজি হলেন। তবে শর্ত দিলেন একটা। তার সঙ্গে দশজন মানুষকে যেতে হবে। সবাই এক বাক্যে রাজি! ঠিক হলো, আজ রাতেই রওনা দেবে হোজ্জাকে নিয়ে দশজন লোক।
হোজ্জা চলছেন আগে আগে। পেছনে দলবেঁধে যাচ্ছেন বাকি দশজন। হঠাৎ একজন পেছন থেকে দে চম্পট! লুকিয়ে লুকিয়ে চলে এলো গ্রামে। তার দেখাদেখি আরেকজন পালালো । তারপর আরেকজন। তারপর আরও একজন। হোজ্জা কিন্তু এসবের খেয়ালই রাখেননি! তিনি মনের সুখে দুলতে দুলতে তৈমুর লংয়ের দরবারে হাজির হলেন।
তৈমুর লং গমগমে গলায় বললেন, ‘কী হে হোজ্জা! কী মনে করে এলে’?হোজ্জা হাতির কথা বলতে গিয়ে যেই পেছনে ফিরেছেন, দেখেন একটা কাক পক্ষীও নেই পেছনে! রাগে শরীর চিড়মিড়িয়ে উঠলো তার। এমন ভীরুদের জন্য তিনি আরজি জানাতে এসেছেন! ভাবলেন, ঠকবাজ গ্রামবাসীদের একটু জব্দ করবেন!
হোজ্জা তৈমুর লংয়ের সামনে হাতজোর করে বললেন, ‘হুজুর! আপনি যে হাতিটা গ্রামবাসীদের দিয়েছেন, তার মেজাজ বড্ড বিগড়ে গেছে। তার যে কী চাই…….!’
এটুকু বলতেই তৈমুর লং হোজ্জাকে থামিয়ে দিলেন। বললেন, ‘বুঝেছি। তার একটা সঙ্গী লাগবে! তুমি যাও। এখনি আমি আরেকটা হাতি ওই গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছি’!